দেশভাগের বেড়ার ফাঁকে মুক্ত আলো - পরিচালক ঋত্বিক ঘটক
সূত্র : গুগল |
বাঙালি সহস্র কোটি স্বার্থত্যাগের পর অবশেষে ১৯৭১ এর বাংলাদেশ স্বাধীন হয়। স্বাধীনতার মায়ায় বাংলার রাজনীতি, অর্থনীতি, সমাজ, সংস্কৃতি - সব ক্ষেত্রেই পরিবর্তন আসে শুধু ধর্মীয় ভিত্তিতে। রাতারাতি এক ও অদ্বিতীয় বাংলা, দুই বাংলায় ভাগ হয়। এই বিষয়গুলি নিয়ে প্রচুর বই লেখা হয়েছে, তবে সিনেমার পর্দায় এই বঙ্গদূর্যোগকে যেভাবে প্রস্ফুটিত করা গেছে তা হয়তো অন্য কোন ক্ষেত্রে করা যায়নি। বঙ্গ-ভাগ নিয়ে তৈরি সিনেমার প্রাণপুরুষ ছিলেন সবার পরিচিত একজন অসামান্য পরিচালক ঋত্বিক ঘটক।
প্রথম ছবি 'নাগরিকের কাজ', তারপর একে একে 'অযান্ত্রিক', 'বাড়ি থেকে পালিয়ে', 'কত অজানারে' ছবিগুলি করেন। তার চলচ্চিত্রগুলি নাটকীয়তায়, আবেগের স্পর্শে, মানবিক আবেদনে এবং দৃশ্য ও সংগীতের অসামান্য মেলবন্ধনে ক্লাসিক পর্যায়ের উন্নীত হয়েছিল। শুধুমাত্র ছবির ডকুমেন্টেশন নয়, কাহিনীচিত্রগুলি ছিল এক একটা আস্ত আর্ট যা তাকে দর্শকের মনে দীর্ঘস্থায়ী ছাপ ফেলতে সাহায্য করে।
সিনেমা - তিতাস একটি নদীর নাম; সূত্র : গুগল |
৭১-এ বাংলাদেশ স্বাধীন হবার পর ঋত্বিক ঘটক অদ্বৈত মল্লবর্মনের উপন্যাস - 'তিতাস একটি নদীর নাম' -র অবলম্বনে ছবি তৈরি করেন। রঙের ব্যবহারে এবং ক্যামেরার অভিনব কলা কৌশলে এক ব্যাপ্ত সমাজের ছবি উঠে আসে। বহু মানুষের একসাথে বেঁচে থাকার সংগ্রাম এমনভাবে বাংলা সিনেমায় এর আগে কখনো দেখানো হয়নি। জেলেরা কীভাবে লড়াই করে জলে ও ডাঙ্গায়, কি সুর ভেসে বেড়ায় জেলেপাড়ায়, কি রং আছে তাদের জীবনে - তা সঠিকভাবে তুলে ধরেছেন ঋত্বিক এই ছবিতে। |
সিনেমা - মেঘে ঢাকা তারা ; সূত্র : গুগল |
‘আমি মনে করি আমার জীবনের শ্রেষ্ঠ কর্ম এই ‘মেঘে ঢাকা তারা’। তিনটি সিনেমা যা দেশভাগের যন্ত্রনাকে মানুষের দোরে আনতে পেরেছিল তার মধ্যে প্রথম - 'মেঘে ঢাকা তারা' (১৯৬০)। 'গোধূলি গগনে মেঘে ঢেকে আছে তারা'। এক নিম্নবিত্ত পরিবারের সমস্ত দায়িত্ব নিয়েছিল পরিবারের বড় মেয়ে নীতা, যা সেই সমাজে খুব একটা সাধারন ঘটনা ছিল না। পরিবারের সকল আশা পূরণ করতে করতে নিজে আস্তে আস্তে শেষ হয়ে যাওয়া সেই নারী চরিত্রটিকে বিজয়ীর আসনে বসাতে চেয়েছিলেন পরিচালক। একমাত্র বড় ভাই ছাড়া সবার অনুভূতি থেকে বঞ্চিত নীতা বাঁচতে চেয়েছিল। সময় আর সম্পর্কের অস্বাভাবিক মেলবন্ধন ঘটেছে ছবিটিতে।
সিনেমা : কোমলগান্ধার; সূত্র : গুগল |
'কোমলগান্ধার' একটি নাটকের দলের গল্প। সদস্যদের দলাদলি, স্বার্থপরতা, অহংবোধ, সংকীর্ণতা এবং একই সঙ্গে পরস্পরের প্রতি নির্ভরশীলতা, মৈত্রী, সহযোগিতা চিত্রিত হয়েছে এই ছবিতে। দেশভাগের জ্বালা ও যন্ত্রণা উঠে এসেছে ছবির অন্যান্য ঘটনার পাশাপাশি
সিনেমা - সুবর্ণরেখা; সূত্র : গুগল |
সুবর্ণরেখায় সীতার যে শৈশবের স্বপ্ন ছিল, তাতে আছে - 'আঁকাবাঁকা নদী আর দূরে দূরে নীল নীল পাহাড় সেইখানে বাগানে প্রজাপতিরা ঘোরে আর গান গায়'। এর পাশাপাশি দৃশ্য - ধ্বংসে পরিতক্ত একটা মিলিটারি এয়ার বেসে দুটো ছোটো ছেলে মেয়ের স্বপ্ন বুনছে আর পরিক্রমা করছে - ঈশ্বর এবং সীতা। এরপর উদ্বাস্তু ক্যাম্প থেকে তাদের বড় হওয়া, সীতার অভিরামের সঙ্গে প্রেম এবং পালিয়ে যাওয়া, শেষে ড্রাইভারের চাকরি পেয়ে অভিরামের দুর্ঘটনায় মৃত্যু। সীতার অভাবী জীবন এবং শেষ পর্যন্ত দাদার সাথে কোন যোগাযোগ না করেই বারবনিতার পথ বেছে নেওয়া, শুধুমাত্র বিনুকে মানুষ করবে বলে - এই সব ঘটনা ১৯৬২ তে বাংলা সিনেমায় অভাবনীয় ছাপ ফেলল। তার ছবিগুলি হতাশা নিরাশার মধ্যেও ভোরের আলোর দিকে চেয়ে থাকতে বলে। সংগীতের আমেজে, ইমেজরিতে, সংলাপের কাব্যময় ব্যবহারে তিনি তৈরি করতেন ম্যাজিক ।
A blog by Sreya Mukherjee ✒️📝
For more interesting thoughts about Cinema, keep following .
Bah ❤
উত্তরমুছুনধন্যবাদ
মুছুনKaabil-E-Tareef :>
উত্তরমুছুন